আন্তর্জাতিক

চীনে এক অঞ্চলে তীব্র খরা এবং অন্য অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা

চীনের ইয়াংজি নদী এশিয়ার দীর্ঘতম জলপথ হিসেবে পরিচিত যার পানি এখন সর্বোচ্চ নিম্নস্তরে পৌঁছেছে।

ফলশ্রুতিতে রেকর্ড তাপমাত্রায় চীনের অর্ধেক অঞ্চলজুড়ে তীব্র খরা দেখা দিয়েছে। এমনকি হিমশীতল এলাকা হিসেবে পরিচিত তিব্বতীয় মালভূমিতেও তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনে ৭০ দিন ধরে একটার পর একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। তাঁরা বলছেন, আরও বেশি বেশি দাবানল, বন্যা ও খরার মতো পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াজনিত বিরূপ এই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

চীনের দক্ষিণ–পশ্চিম অঞ্চলে ব্যাপক খরা ও দাবদাহ চলছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ মানুষজনকে স্বস্তি দিতে চীনা কর্তৃপক্ষ ভিন্ন চিন্তা শুরু করেছে।

চীনা কর্তৃপক্ষ দেশটির মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তীব্র খরার মুখে পড়া ইয়াংজি নদীর আশপাশের প্রদেশগুলো বৃষ্টিপাতের ঘাটতি মোকাবিলায় ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করছে। হুবেইসহ কিছুসংখ্যক প্রদেশে রকেটের মাধ্যমে আকাশে রাসায়নিক পদার্থ ছিটানো হচ্ছে।

ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে মূলত আকাশে বৃষ্টির জন্য উপযুক্ত না হওয়া মেঘের ওপরে রাসায়নিক ছিটানো হয়। এরপর মেঘ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে। কিন্তু কিছু এলাকার আকাশে যথেষ্ট মেঘ না থাকায় কৃত্রিম বৃষ্টির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ানের কিছু অংশে বুধবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে দাবদাহের তীব্রতা কিছুটা কমলেও অঞ্চলটির প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়াও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, চীনের দাঝো শহরটিতে ৫৪ লাখ মানুষের বাস, যাদের তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে থাকতে হচ্ছে। দাবদাহের এলাকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অর্ধেক এখন পানি নেমে যাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গুয়ানদং প্রদেশ এবং আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় মা-অন।

চীনের কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণ চীন, জিয়াংজি এবং আনহুই অঞ্চলে উচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। কিন্তু আগামী তিন দিন সিচুয়ান অববাহিকা ও সাংহাইয়ের আশপাশের প্রদেশগুলোতে চলমান এই উচ্চ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে।

কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ায় একাধিক প্রদেশে শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। অপর দিকে অনেক শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বেশ কিছু কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি বলেছে, চিংহাই প্রদেশের দাতং কাউন্টির পার্বত্য অঞ্চলে চলতি সপ্তাহে আকস্মিক বন্যায় ১৬ জনের মৃত্য হয়েছে এবং ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও ছয়টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার ২০০ জনের বেশি লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্রঃ বিবিসি

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *