আন্তর্জাতিক

ইরানে হিজাব ইস্যুতে বিক্ষোভে নিহত অন্তত ৫০

ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানী তেহরানে হিজাব আইনভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার মাহশা আমিনি (২২) পুলিশ হেফাজতে মারা হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের এক সপ্তাহের মাথায় গতকাল শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) হিজাবের পক্ষে পাল্টা সমাবেশ করেছেন সরকার সমর্থকরা। সূএ: আবর নিউজ।

ইরানের মানবাধিকার সংস্থা গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা সরকারি ঘোষণার চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি। সরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১৭। এর মধ্যে পাঁচজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।

আরও জানায়, দেশটির ছোট-বড় ৮০টি শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কুর্দি বংশোদ্ভূত মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তেহরানের নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনদিন কোমায় থাকায় পর মারা যান তিনি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্ষোভকারীদের জমায়েত বাধাগ্রস্ত করতে এবং বহির্বিশ্বে বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়া আটকাতে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইরানের সরকার।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নৈতিক পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে আমিনির মাথায় আঘাত লাগে। তবে ইরানের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তারা এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।

মাহাশা আমিনিকে মৃত ঘোষণা করার পর প্রথম তার জন্মস্থান কুর্দিস্তান প্রদেশের শাকাজ শহরে ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে রাজধানী তেহরানসহ ইসফাহান, মাশহাদ, শিরাজ এবং তাবরিজ’র মতো প্রধান শহরগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে।

ইরানের মানবাধিকার সংস্থা জানায়, চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা অন্তত ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশটির উত্তর গিলান প্রদেশের রেজভানশাহর শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর অগ্নিকাণ্ডে ছয়জন নিহত হন। বাকিরা বাবল ও আমোল শহরে নিহত হয়েছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও’তে দেখা গেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েকজন নারী তাদের হিজাব খুলে ফেলে তা আগুনে পুড়িয়ে দেন। অনেকে প্রতিবাদ স্বরূপ নিজেদের মাথার চুল কাটেন।

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা একাধিক বিক্ষোভকারী গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে মজিদ তাভাকলিও রয়েছেন। ২০০৯ সালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে একাধিকবার কারারুদ্ধ হয়েছেন তিনি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছে এবং তাদের গাড়িতে আগুন দিয়েছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার হিজাবের পক্ষে পাল্টা সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার সরকার সমর্থক। তেহরান এবং আহভাজ, ইসফাহান, কোম এবং তাবরিজসহ বিভিন্ন শহরে তারা এই সমাবেশ করেন।

ইরানের সংবাদ সংস্থা বলেছে, ‘ধর্ম অবমাননা ও ষড়যন্ত্রকারীদের নিন্দা জানাতে আজ ইরানের জনগণ মহান বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।’

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা ফুটেজে দেখা যায়, তেহরানে হিজাবের পক্ষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগ দেওয়া বেশির ভাগই পুরুষ। তবে কিছু নারীও ছিলেন, যারা কালো চাদর পরেছিলেন।

ইরানের সরকার বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক কার্যক্রম ধীরগতি করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভের তীব্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিক্ষোভের মধ্যেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর হিজাব ছাড়া ফেসবুকে ভিডিও আপলোডের অভিযোগে দেশটির মানবাধিকারকর্মী মেলিকা কারাগোজলুকে পৌনে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার পর থেকে নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক। দেশটির মোরাল পুলিশ এই ড্রেস কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ড্রেস কোডের নিয়ম বাস্তবায়নে বিভিন্ন মানুষ বিশেষত তরুণীদের সঙ্গে মোরাল পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা অনেক সময় জোর করে নারীদেরকে পুলিশের গাড়িতে তোলে।

২০১৭ সালে কয়েক ডজন নারী জনসম্মুখে হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানান। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *