মানসিক প্রশান্তির জন্য রেলওয়ের পাওনা ফেরত দিয়েছেন
দুদক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক (৬৫) জীবনে অনেকবার টিকিট ছাড়া ট্রেন ভ্রমণ করেছেন। অবশেষে মানসিক প্রশান্তির জন্য তিনি রেলওয়ের সেই পাওনা ফেরত দিয়েছেন। জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছেন, তার সব হিসেব করে পরিশোধ করে দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে এসে ভ্রমণের পাওনা সব টাকা পরিশোধ করেন এমদাদুল হক। তার ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশংসায় ভাসছেন এমদাদুল হক। এমদাদুল হক এখন শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়, সারা দেশের একজন অনুকরণীয় ব্যক্তি।
জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছিলেন তার হিসেব করে রেখেছিলেন এমদাদুল। দেনার দায় থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে হিসাব করে ২ হাজার ৫৩০ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এমদাদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কনিকাড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে। জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা এমদাদুল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যান।
এমদাদুল হকের বড় ছেলে ইমরান বলেন, আমার বাবা সৎভাবে জীবনযাপন করেন। অন্য কেউ মনে কষ্ট পাবেন এমন কাজ তিনি কখনও করেননি। কারও কাছে এক টাকা ঋণ থাকলেও তাকে খুঁজে বের করে পরিশোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, শেষের দিকে বাবা দুদকের হেডকোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা ট্রেনে অনেকবার যাতায়াত করেছেন। সেসময় বিভিন্ন কারণে তিনি ট্রেনে টিকিট না কেটে আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু যতবার তিনি ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন, তার হিসেব তিনি করে রেখেছিলেন। আর সেই হিসেব অনুযায়ী তিনি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে টাকা পরিশোধ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী কবির হোসেন তালুকদার বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশন কাউন্টারে এক ব্যক্তি আসেন বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের টাকা পরিশোধ করবেন বলে। তিনি জানান যে, আগে বিভিন্ন সময়ে টিকিট না কেটে ভ্রমণের হিসেব তার কাছে আছে। সে হিসাবে তিনি ২ হাজার ৫৩০ টাকা রেলওয়েকে দিতে চান। তখন স্টেশন বুকিং কাউন্টার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চট্টগ্রাম পর্যন্ত মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনে ২ হাজার ৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করে দেওয়া হয়। পরে স্টেশন প্রধান বুকিং সহকারীর অফিসে বসিয়ে আপ্যায়ন এবং ধন্যবাদ দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এমদাদুল হক নতুন প্রজন্মকে একটি শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা অন্যায়। উনি সবার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তার ট্রেন ভ্রমণে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।
এমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা দেনা রেখে যতই পুণ্য কাজ করি না কেন, এই দেনার দায় তো কোনকিছু দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। আমি সরকারি চাকরির সুবাদে প্রায়শই ঢাকায় ট্রেনে আসা-যাওয়া করতাম। অনেক সময় ট্রেনের টিকিট কেটেই আসা-যাওয়া করতাম। চাকরির শেষ সময়ে মাঝেমধ্যে ব্যস্ততা, ভিড় বা সময় স্বল্পতার জন্য টিকিট কাটতে পারিনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে পূর্বের ট্রেনের ভাড়া না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনুশোচনায় ভুগছিলাম। সেই অনুশোচনা থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে এসে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর ২৫৩০ টাকার সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট কেটে দায় মুক্তি হলাম।’