অপরাধ

ইউটিউব-ফেসবুক দেখে জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন

ইউটিউব-ফেসবুক দেখে জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। এক পর্যায়ে ফেসবুকে একটি গ্রুপে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিন লাখ টাকার জাল নোট কিনতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পরিশোধ করেন ৩৫ হাজার টাকা।টাকা পরিশোধ করলেও হাতে পাননি। প্রতারিত হয়ে নিজেই জাল নোট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।

মাউন হোসেন সাব্বির নামে ওই তরুণ ফেসবুক গ্রুপ খুলে তৈরি করেন অন্তত ২০ সদস্যের চক্র। যারা বিভিন্ন সময়ে সবমিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দিয়েছেন বাজারে।

অবশেষে জাল নোট তৈরি চক্রের মূলহোতা মাউন হোসেন সাব্বিরসহ (২১) চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। গ্রেফতার বাকিরা হলেন—পারভেজ (২০), তারেক (২০) ও শিহাব উদ্দিন (২০)।

শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর চকবাজার, সিরাজগঞ্জ সদর এবং খুলনার খালিশপুর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট, ১টি ল্যাপটপ, ১টি প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতাররা পরস্পর যোগসাজশে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করতেন। নিজেরা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান, মাছের আড়ৎসহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় জাল নোট ব্যবহার করতেন। চক্রটির অন্যতম মূলহোতা মাউন হোসেন সাব্বির। এই চক্রে আরও ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছেন। স্বল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে ধনী হওয়ার জন্য এই প্রতারণার পথ বেছে নেন তারা।

ইউটিউব-ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই তারা জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। চক্রের হোতা সাব্বিরের ফেসবুকে ‘জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোস্ট’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে গ্রেফতার বাকিদের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তিনি জাল নোটের খুচরা ব্যবসার পরিকল্পনা করেন।

চক্রের গ্রেফতার সদস্যরা পরে ফেসবুকে অপর একটি জাল নোট তৈরি চক্রের সঙ্গে সাব্বিরের পরিচয় হয়। সেই চক্রের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার জাল নোট কিনতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা পাঠান সাব্বির। কিন্তু টাকা নিয়ে তাকে জাল নোট সরবরাহ করেনি সেই চক্র। প্রতারিত হয়ে নিজেই জাল নোট তৈরিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন সাব্বির। সে অনুযায়ী মেসেঞ্জারে এক্স-ম্যান নামে একটি গ্রুপ খুলে জাল টাকা তৈরি-ব্যবসার বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করতে থাকেন।

গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন শিহাব। তার মাধ্যমে গ্রেফতার পারভেজ এবং তারেকের সঙ্গে সাব্বিরের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সাব্বির ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল ঘেটে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেন। জমানো অর্থ দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় করেন সাব্বির।

জাল নোটের ব্যবসা রমরমা থাকলে চক্রটি দৈনিক ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়তো। ফেসবুক গ্রুপ ‘জাল টাকা প্রতারক চক্র বিরোধী পোস্ট’ থেকে কমেন্টস দেখে তারা যোগাযোগ করতেন মেসেঞ্জারে। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে বিক্রি করতেন জাল টাকা। চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ, খুলনা, যশোর এলাকায় সরবরাহ করতেন জাল নোট।

সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা না করে কথাবার্তা বলে তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন। প্রতি লাখ জাল টাকা বিক্রি করতেন ১৫-২০ হাজার টাকায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি মূলত জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতকরণের জন্য ঢাকাকে নিরাপদ ও সহজ স্থান বলে মনে করতো। তারা বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট ব্যবহার করতো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জাল নোট প্রিন্টিংয়ের সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলতো। তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা গেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার সাব্বির বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ২০১৯ সালে ঢাকায় মিটফোর্ডে একটি ওষুধের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি ঢাকাতে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যায়নরত সাব্বির জাল নোট তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।

গ্রেফতার শিহাব স্থানীয় একটি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপে জাল নোট ব্যবসার সংবাদ দেখে সাব্বিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি চক্রে জাল টাকা প্রিন্টিং, কাটিং এবং বান্ডিলিংসহ প্যাকিংয়ের কাজ করতেন।

গ্রেফতার পারভেজ ২০২০ সাল থেকে একটি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। তিনিও ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপে জাল নোট ব্যবসার সংবাদ দেখে আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে শিহাবের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং চক্রে জড়িত হন। তিনি জাল নোট তৈরি এবং প্রিন্টিংয়ের কাজ করতেন।

তারেক স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত। শিহাবের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে তিনি চক্রে জড়িত হন। তিনি জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করতেন।

NewsDesk

Recent Posts

ভিসা আবেদনকারীদের যে বার্তা দিল মার্কিন দূতাবাস

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের পতন ঘিরে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে গত…

1 year ago

শেখ হাসিনা ও ভারতকে সতর্কবার্তা দিলেন ড. ইউনূস

দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতকে একহাত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.…

1 year ago

নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের ঘোষণা

পদত্যাগ করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ কমিশনার । আজ বৃহস্পতিবার (৫…

1 year ago

৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস ৮ জেলায়

৮ জেলায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে ,মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর…

1 year ago

জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ সংসদ চান তারেক রহমান

জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে ‘জাতীয় সরকারের’ মাধ্যমে দেশ পরিচালনা চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত…

1 year ago

স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১ মাস পূর্তি

স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার কবলমুক্ত হওয়ার এক মাস পার করছে বাংলাদেশ। আজ থেকে ঠিক একমাস…

1 year ago