আইন-আদালতবিশেষ সংবাদসারাদেশ

সরকার ৩ পুলিশ সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালেন

তিন পুলিশ সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। এরমধ্যে সিআইডির দুই পুলিশ সুপার রয়েছেন।

অবসরে পাঠানো তিন পুলিশ সুপার হলেন—সিআইডির মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী এবং পুলিশ অধিদপ্তরের দেলোয়ার হোসেন মিঞা।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এই তিন কর্মকর্তার মধ্যে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী পিপিএম এবং মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী পিপিএম (সেবা) পদকপ্রাপ্ত।

এ বিষয়ে গত রাতে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাঁরা ঠিকমতো অফিস করেন না। কাজকর্মও করেন না। ফেসবুকে অপপ্রচার চালান। এসব অভিযোগ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের আইনানুযায়ী অবসরে পাঠানো হয়েছে। ’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে তাঁদের চাকরির পূর্ববর্তী রেকর্ড মিলিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বিসিএস ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তিনি পাবনা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও গোপালগঞ্জে এসপির দায়িত্বে ছিলেন। আব্দুল্লাহেল বাকী রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক বা পিপিএম (সেবা) পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আর পদোন্নতি পাননি। তাঁর ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন অতিরিক্ত আইজি ও ডিআইজি।

দেলোয়ার হোসেন মিঞা ও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী বিসিএস ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির আমলে জামালপুল ও মুন্সীগঞ্জ জেলার এসপি ছিলেন। শহীদুল্লাহ চৌধুরী পিপিএম পদকপ্রাপ্ত। দেলোয়ার হোসেনও বিএনপির আমলে একাধিক জেলার এসপি ছিলেন। এসপি পদের পর এ দুজনেরও আর পদোন্নতি হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আব্দুল্লাহেল বাকীর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি এবং দেলোয়ার হোসেন মিঞা ২০২৬ সালের ৪ জুন।

পুলিশ ও জননিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি এই কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুটি সংস্থা থেকে গোপন প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা কয়েক দিন আগে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। গোপন ওই প্রতিবেদনের সূত্রে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হতে পারে। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তা বলছেন, দীর্ঘদিন সরকার তাঁদের পদোন্নতি দিতে পারছে না বলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে।

মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘সারা দিন অফিসেই ছিলাম। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। একজন সাংবাদিক ফোন করে খবরটা জানান। শুনেই চমকে যাই। যা-ই হোক, এখন চাকরি নাই, এটাই সত্য। তবে জোরগলায় বলতে পারি, আমি সরকারবিরোধী নই, কোনো দলেরও ছিলাম না। পুলিশে যোগ দেওয়ার পর পেশাদারির সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছি। ’

তাহলে কেন অবসরে পাঠানো হলো—এমন প্রশ্নে আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে এ বিষয়ে কোনো পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। ’ বিরোধী দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ দিন আগেও সরকারি সফরে দুবাই গিয়েছি। সব সময় সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। ’

মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘আমার জুনিয়ররাও প্রমোশন পেয়ে ওপরে উঠে গেছে। তাদেরকে আমার স্যার বলতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আর্থিক সামর্থ্য থাকলে ১০ বছর আগেই চাকরি ছেড়ে দিতাম। ’

বাকি দুই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এর আগে তথ্যসচিব মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ পাওয়ার পরদিন সোমবার মকবুল হোসেন দাবি করেন, সরকারবিরোধীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *