বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে নতুন ঘোষণা
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম এখনই বাড়ছে না, এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিদ্যুৎ কেনার যথাযথ তথ্য না পাওয়া ও অস্বচ্ছতার কারণে মূল্যায়ন করতে না পারায় মূল্য বৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। তাই বিদ্যুতের আগের দাম অপরিবর্তিত থাকছে।
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ আদেশ ঘোষণা করেছে বিইআরসি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, সরকার ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এটি দিয়ে পিডিবি ঘাটতি সমন্বয় করতে পারছে। এসব বিবেচনা করেই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গ্রিড বিপর্যয় আর জ্বালানি সংকটের ধাক্কায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে তীব্র লোডশেডিং সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেই আবার সামনে এসেছে বিদ্যুতের দামের বিষয়টি।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়াতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে ওঠা বিভিন্ন পক্ষের যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা শেষে বৃহস্পতিবার আদেশ ঘোষণা করে কমিশন।
শুনানির পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে আদেশ ঘোষণার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময় সীমা শেষ হওয়ার দিনই সিদ্ধান্ত জানাল বিইআরসি। এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে ১৩ জুলাই বিইআরসিতে একটি চিঠি দিয়েছে ক্যাব। এতে বলা হয়, জ্বালানি খরচ কমিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে কম। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন আর যৌক্তিক নয়।
সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সংকটময় পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম নিয়ে নীতিনির্ধারকরা কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি চান না।
এদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম এখন বাড়ছে না। তিনি বলেন, যেহেতু খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই আপাতত দাম বাড়ানোর কথা চিন্তা করছে না সরকার। পরবর্তী সময়ে যদি এ ধরনের কোনো প্রভাব পড়ে, তখন দেখা যাবে। যদি দাম বাড়ানোও হয়, তা হবে খুব সামান্য। এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়া, অব্যাহত লোডশেডিংসহ বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এখন দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, যেকোনো সার্ভিসের মান যখন খুব খারাপ থাকে, সে সময়ে মূল্যবৃদ্ধি জনগণের ওপর বেশ আঘাত করে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, সংকট কাটাতে ইতোমধ্যে লোডশেডিংয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে এসে আমি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যৌক্তিক মনে করি না।অপরদিকে গ্রিড বিপর্যয়ের পর ওলটপালট হয়ে যাওয়া লোডশেডিং সূচি নিয়ে বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠক করে বিদ্যুৎ বিভাগ। বৈঠকে গ্রাহকদের আগে থেকেই লোডশেডিং শিডিউল জানিয়ে দিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। জ্বালানি সংকটে এখনো দিনে এক হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতে দাম। সবশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। ওই সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয় দাম। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।