বিশেষ সংবাদরাজনীতিসারাদেশ

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে তিনি এই ঘোষণা দেন।

এর আগে ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানান তিনি।

সিইসি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টায় আজকের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশন ভবনে একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ করেছি। পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। আমরা কেন্দ্র থেকে এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। আপনারাও একটা সময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন। আমরা প্রথম থেকে লক্ষ করেছি—ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে আমরা গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশ লক্ষ করেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারদের ভোট প্রদানে সহায়তা করছে, অথবা বাধ্য করছে। এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করেছি।প্রথমে তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছি। এরপরে ১৬টি কেন্দ্রে, তৃতীয় দফায় ১২টি; চতুর্থ দফায় ৯টি এবং সবশেষ আরও তিনটি, মোট ৪৩টি ভোটকেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিয়ে সাড়ে ১২টায় কক্ষ ত্যাগ করি।

সিইসি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করলাম—কতগুলো কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো। যার ফলে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। সবমিলিয়ে মোট ৫০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করেছি। রিটার্নিং অফিসারও একটি কেন্দ্রের ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে।

এরপর আমরা কমিশনের সব সদস্য মিলে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে থাকি, বিশ্লেষণ করতে থাকি। আমরা নিশ্চিত হই, ৫০টি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ হয়ে গেলে বাকি কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ, ফলাফল—সব বিবেচনা করলেও আসলে সঠিক মূল্যায়নটা হবে না। এ পর্যায়ে আমাদের আরপিও ৯১-ই ধারা অনুযায়ী কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়, ভোট সঠিকভাবে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। একটি পক্ষ বা একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাবিত করতে পারছেন। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা ৫১টি ভোট কেন্দ্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর আইন কানুন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ অনুচ্ছেদে যে দায়িত্ব ইসিকে দেওয়া হয়েছে, ইসির কাছে এটা প্রতীয়মান হয় নির্বাচন সঠিকভাবে হচ্ছে না। যে কোনো কেন্দ্রে বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট কমিশন বন্ধ করে দিতে পারবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা পরিশেষে এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—সমগ্রহ কন্সটিটিউয়েন্সি পুরো নির্বাচন গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)। ওখানে এখন আর ভোট হচ্ছে না। পরবর্তীতে বিধি বিধান অনুযায়ী কী করতে হবে দেখব। কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

এদিকে নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন অন্যান্য সব প্রার্থী।

বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা ভোটকেন্দ্রে একত্রিত হয়ে বাকি চার প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা হলেন, জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের এ এইচ এম গোলাম শহীদ রনজু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকের জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী আপেল প্রতীকের নাহিদুজ্জামান নিশাদ ও ট্রাক প্রতীকের সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

এ সময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মাহমুদ হাসান রিপনের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেওয়া, ইভিএমএ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ তুলে ভোট বাতিলের দাবি জানান তারা।

একই সঙ্গে আবার তফসিল ঘোষণা করে ভোটগ্রহণের দাবিও জানান প্রার্থীরা। আগে থেকেই সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কাসহ নানা অভিযোগ করে আসছিলেন তারা। এর আগে গোপন কক্ষে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়াসহ নানা অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনায় একে একে ৪৫ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপ-নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ মোট ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে মিলে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।

অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া টানা নয় মাস ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে গত ২২ জুলাই দিনগত রাত ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ কারণে তাঁর আসনটি শূন্য হয়।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *