আওয়ামী লীগ নেতা গণধোলাই থেকে বাঁচতে পানিতে ঝাঁপ, তুলে এনে গণধোলাই
কুড়িগ্রাম রৌমারী উপজেলায় পাওনা টাকা চাওয়ায় এক নারীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ সময় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে আত্মরক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপ দেন তিনি। পরে পানি থেকে তুলে তাকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা।
শুক্রবার রাতে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের সায়দাবাদ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই নেতাসহ তিনজনকে থানায় নেয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের থানায় না নিয়ে পথেই ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহা আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বগুড়ার এক গৃহবধূ সায়দাবাদ বাজারের আব্দুর রশিদের চায়ের দোকানে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামালের কাছে ১৫ লাখ টাকা পান বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সকলে হকচকিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ওই দোকানেই উপস্থিত লোকজন বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক চলাকালীন সময়ে হঠাৎ ওই গৃহবধূ আওয়ামী লীগ নেতার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল ওই গৃহবধূর মাথায় ঘুষি ও ধাক্কা মেরে পালানোর চেষ্টা করেন। একজন নারীকে নির্যাতনের এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় জনতা ওই নেতাকে ধাওয়া করলে তিনি আত্মরক্ষার জন্য পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে তাকে পানি থেকে তুলে এনে গণধোলাই দেয় বিক্ষুদ্ধ জনতা।
যাদুরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহা কামাল বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সুরুজ্জামাল পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাকে আমরা উদ্ধার করি। এ সময় তার পরনের পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি ছেঁড়া ছিল। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পাই এক নারীকে ধাক্কা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া দিলে তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে ওই নারীসহ সুরুজ্জামালকে থানায় পাঠানো হয়।’
নির্যাতিত গৃহবধু লাভলী বেগম বলেন, ‘সুরুজ্জামাল চাচার সাথে আমার ঢাকায় পরিচয় হয়। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই বলে পরিচয় দেন। তাকে ২০১৯ সালে আমার বদলি এবং আমার মামাতো ভাইয়ের চাকরির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিই। কিন্তু তিনি সেই টাকা না দিয়ে আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছেন। এপর্যন্ত তার কাছে আমি ৭/৮ বার এসেছি টাকা ফেরত নেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে শুধু টালবাহনা করেন। শুক্রবার রাতে তাকে সায়দাবাদ বাজারে পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমার গায়ে হাত তোলেন। এসময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাওয়া করেন। তিনি উপায় না পেয়ে বাজারের পাশে একটি ডোবার পানিতে ঝাঁপ দেন।’
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়াকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ রূপ কুমার সরকার বলেন, ‘এমন ঘটনা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’