অপরাধঅর্থনীতিসারাদেশ

হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে

হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। গত এক বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি কারবার করা ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর সময় এমন তথ্য দেয় সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

গ্রেফতাররা হলেন- আক্তার হোসেন (হুন্ডি এজেন্ট), দিদারুল আলম সুমন (হুন্ডি এজেন্ট), খোরশেদ আলম ইমন (হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী),  রুমন কান্তি দাস জয় (বিকাশ এজেন্ট), রাশেদ মাঞ্জুর ফিরোজ (বিকাশ এজেন্ট), মো. হোসাইনুল কবির (বিকাশ ডিএসএস), নবীন উল্লাহ (বিকাশ ডিএসএস), মো. জুনাইদুল হক (বিকাশ ডিএসএস), আদিবুর রহমান (বিকাশ ডিএসও), আসিফ নেওয়াজ (বিকাশ ডিএসও), ফরহাদ হোসাইন ( বিকাশ ডিএসও), আবদুল বাছির (বিকাশ এজেন্ট), মাহাবুবুর রহমান সেলিম (বিকাশ এজেন্ট), আবদুল আউয়াল সোহাগ (বিকাশ এজেন্ট), ফজলে রাব্বি (বিকাশ এজেন্ট)। এছাড়া, এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, চার সিমে তিন কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ ইলেকট্রনিক মানি, মোবাইল ৩৪টি। এ ঘটনায় মোট ৪টি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি।

মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি তারা বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়ের মাধ্যমে এই ৫ হাজার এজেন্ট গত ৪ মাসে ২৫ হাজার কোটি এবং বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ উল্লেখ করে সিআইডি প্রধান বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এই ঝুঁকি মোকাবিলায় সিআইডি হুন্ডি কার্যক্রমের উপর নজরদারী শুরু করে।

অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আনরিদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে উক্ত বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে, দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় উক্ত অর্থ এমএফএস এজেন্টকে দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।

এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *