Generalবিশেষ সংবাদসারাদেশ

৭ সমঝোতা স্মারক সই শেখ হাসিনা-মোদি বৈঠকে

আজ মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি আবার বলছি যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।গত এক দশকে উভয় দেশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে। তাঁরা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইসহ সব অমীমাংসিত ইস্যু দ্রুত সমাধানের আশা করছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গত বছর আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। আমরা গত ৬ ডিসেম্বর প্রথমবার একসঙ্গে ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করেছি। আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।

এখন বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য দিন দিন বাড়ছে। আমরা আইটি, মহাকাশ এবং পরমাণুখাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নিয়েও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা চলছে। দু’দেশের মানুষে মানুষে যোগাযোগও ক্রমেই বাড়ছে।’

ভারতকে এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাণিজ্য এগিয়ে নিতে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট-সেপা) জন্য শিগগির আলোচনা শুরু করবো আমরা।

দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক শেষে ৭ সমঝোতা স্মারক সই হয়।

সমঝোতা স্মারকগুলো হলো-

১. কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশের ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সমঝোতা স্মারক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। ভারতের পক্ষে সই করেন জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের পানিসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন বিভাগের সচিব পঙ্কজ কুমার।

২. বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ। ভারতের পক্ষে সই করেন সিএসআইআরের মহাপরিচালক ড. এন. কালাইসেলভি।

৩. বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ও ভারতের ভুপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল অ্যাকাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রাব্বানি এবং ভারতের পক্ষে বিচারপতি এ.পি. সাহি সই করেন।

৪. ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে রেলওয়ে বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী পরিচালক ভি জি ভুমা সই করেন।

৫. বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয় আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে দেশটির রেলওয়ে বোর্ডের ইডিটি (ট্রাফিক) দীপক কুমার ঝা সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

৬. ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতী’র সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমঝোতা স্মারক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন এবং ভারতের ‘প্রসার ভারতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মায়াঙ্ক কুমার আগারওয়াল।

৭. বাংলাদেশের বিটিসিএল ও ভারতের এনএসআইএলের মধ্যে মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক। এতে বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং এনএসআইএল চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রাধাকৃষ্ণাণ সই করেন।

আজ সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানানো হয়।শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে গেলে তাঁকে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি। দুই প্রধানমন্ত্রী করমর্দন করেন। পরে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপতি ভবনের আনুষ্ঠানিকতার পর শেখ হাসিনা রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ বৈঠক বসেন।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধনখড় এবং পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *