অপরাধঢাকাসারাদেশ

পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে ছাত্রীদের টার্গেট করে ছিনতাই

মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে টহল দিতো একটি চক্র। এরপর কোনও এক ছাত্রীকে টার্গেট করতো তারা। তার গতিরোধ করে ব্যাগের ভেতরে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে বলে ভয়ভীতি দেখাতো। একপর্যায়ে ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেলে তুলে নির্জন কোথাও গিয়ে ছাত্রীর কাছে থাকা দামি জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়, শ্লীতাহানিরও চেষ্টা করে।

রাজধানীর তুরাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর করা একটি মামলার সূত্র ধরে এই চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল ওই ঢাবি শিক্ষার্থীকে। পরে তিনি তুরাগ থানায় একটি মামলা করেছিলেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিও তদন্ত শুরু করে। এই চক্রের চার জনকে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্র, মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. শাকিল আহম্মেদ রুবেল, মো. আকাশ শেখ, দেলোয়ার হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি ওয়্যারলেস সেট, দুইটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটর সাইকেল ও ছিনতাই করা ছয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

ডিবি প্রধান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ২৫ আগস্ট দুপুরে ঢাবির এক ছাত্রী মিরপুর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি থেকে কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে নামেন। কিছুদূর যাওয়ার পর শাহী মসজিদের সামনে আসলে অপরিচিত মোটরসাইকেল চালক পুলিশ পরিচয়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দিয়াবাড়ির নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে ছুরির ভয় দেখিয়ে তার গলার চেইন, কানের দুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন তুরাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়।

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, মামলাটি হওয়ার পরপরই থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবির উত্তরা বিভাগের ডিসি শফিকুল আলমের নির্দেশনায় একটি টিম কাজ শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মো. শাকিল আহম্মেদ ওরফে রুবেল ছিনতাই করা মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ওয়্যারলেস সেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীদের টার্গেট করে। সেই ছাত্রীর কাছে অবৈধ মাদক আছে বলে তাকে ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে মোটর সাইকেলে উঠিয়ে নির্জন কোথাও নিয়ে যায়। এরপর তার নিকটে থাকা দামী জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় ও অশালীন আচরণ করে।

এ ধরনের কাজ শাকিলের পেশা হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত সে ১৫০০ অধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ও ৫০ এর অধিক অশালীন আচরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। তার নামে ছয়টি দস্যুতার মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত বাকি তিন জন তার এই কাজে সহায়তা করে থাকে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির আদাবর থানায় অস্ত্র আইনে আরও একটি মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকল সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *