বিশেষ সংবাদসারাদেশ

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের শুল্ক প্রত্যাহার চিন্তা

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে গত ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। জ্বালানি তেলে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে বা প্রত্যাহার করে মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা করছে সরকার।

দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সূত্রে তখন বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, তেল পাচার ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) লোকসানের হাত থেতে বাঁচাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে।

বাড়তি আর্থিক চাপের ফলে শিল্প উৎপাদনে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত খরচ। রফতানি আদেশ কমে গেছে, ফলে এ মুখী শিল্প-কারখানা রয়েছে হুমকির মুখে।

পাশাপাশি পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কাঁচামাল ও অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের দামও লাগামছাড়া। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিকাজে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

এর আগে গত ১১ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তখন জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে এলে দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমও প্রয়োজন হলে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলে আরোপিত শুল্ক কমিয়ে বা প্রত্যাহার করে সমন্বয়ের মাধ্যমেই বর্তমান সংকট নিরসন করা সম্ভব।

গত কয়েক দিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে ছিল। সর্বশেষ পরিশোধিত তেলের দাম নেমে আসে ব্যারেল প্রতি ৮৮ দশমিক ১১ মার্কিন ডলারে। একই সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯১ দশমিক ৫১ ডলারে নামে, যা গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

তবে বিপিসি বলছে, ব্যারেল প্রতি দাম ৮০ ডলারের উপরে চলে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হয়। হ্রাসকৃত দামের তেল সেপ্টেম্বর মাসে অর্ডার করা হবে। ফলে অক্টোবর নাগাদ ধীরে ধীরে কমতে পারে জ্বালানি তেলের দাম।

জ্বালানি তেলে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৭ শতাংশ কর দিতে হয়। জ্বালানি বিভাগের এক হিসাব থেকে জানা যায়, বর্তমানে ১১৪ টাকা প্রতি লিটার ডিজেলের মধ্যে ১৬ টাকা ১৪ পয়সা ভ্যাট পরিশোধ করছেন ক্রেতারা। আয়কর বাবদ প্রতি লিটারে আরও ১৮ টাকা কর দিতে হয়।

এছাড়া সরকার কর্তৃক তেল আমদানিতে গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক ও ভ্যাট রয়েছে। প্রতি লিটার তেলে বর্তমানে ট্যাক্স রয়েছে ৩৬ টাকা। শুল্ক প্রত্যাহার হলে তেলের দাম ৩৬ টাকা পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে জানা গেছে।

জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা জায়, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাব তৈরি করতে ইতিমধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় আমদানি খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কতটা কমিয়ে কীভাবে তা মানুষের আয়ত্তে রাখা যায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

সূত্রে আরও জানা যায়, ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে আয়কর ও ভ্যাটের নতুন হার ঠিক করা হয়েছে। শিগগির পুনর্নির্ধারিত হার কার্যকরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে। যদিও গত বছর সেপ্টেম্বরে জ্বালানি বিভাগ আয়কর ও ভ্যাট পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু তা গ্রহণ করেনি এনবিআর।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *