Generalবিশেষ সংবাদরাজনীতি

বড় সংকট ও চ্যালেঞ্জ মনে করছে  নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)

বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের আস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিই নিজেদের জন্য বড় সংকট ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি যে খসড়া কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে, তাতে এই চ্যালেঞ্জের কথা নিজেরাই উল্লেখ করেছে।

অবশ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়ও খুঁজছে ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত ইসি দলগুলোর আস্থা কতটা অর্জন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষাবিদ, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। তখন ইসি বলেছিল, সংলাপে আসা প্রস্তাব ও সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, কর্মপরিকল্পনার একটি খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা খসড়া পর্যালোচনা করছেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এই খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে।

কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আবার সংলাপে বসার কথা ভাবছে ইসি। অবশ্য সে সংলাপ হবে অনেকটা কর্মশালার মতো। একসঙ্গে অনেক দল ও অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেখানে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসির প্রতি আস্থার সংকটের পাশাপাশি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার, ভোটের সময় মাঠ প্রশাসনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভোটার ও প্রার্থীর এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী, তা নির্ধারণ ও বিশ্লেষণের পর সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে এখন চিন্তাভাবনা চলছে। শেষ পর্যন্ত এই কমিশন পূর্ণ আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদী। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায় ইসি।

তবে এখন পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারেনি ইসি। বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুটি প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যবস্থা ও ইসির প্রতি বিভিন্ন দল ও ভোটারদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, আস্থা অর্জনই এই কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনারদের মুখেও বিষয়টি একাধিকবার এসেছে।

ইসির আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার। কারণ, এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের বিতর্ক আছে। ইসির সংলাপেও সেটা প্রকাশ্য হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। তবে বেশির ভাগ দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে। এই বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি। অবশ্য ইসি এটিও মনে করে, ইভিএম নিয়ে বিরোধিতা অনেক দলের একটি রাজনৈতিক অবস্থান। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা।

ইসি সূত্র জানায়, ইভিএমে ভোটের সুবিধা-অসুবিধা নিজেরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনো সে সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, হলে কতটি আসনে হবে, ইভিএমের কোনো সংস্কার আনা হবে কি না—এসব বিষয় চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনায় আনা হবে।

ইসি যে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপেও ঘুরেফিরে এই বিষয়গুলো এসেছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে সংলাপে আস্থার সংকটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল। তবে ইসি এই সংকট কীভাবে কাটাবে বা আদৌ সবার আস্থা অর্জন করতে পারবে কি না, সে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচনে ইসির শক্ত ভূমিকা দেখা গেলেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসি বিতর্কিত হয়েছে। সংলাপে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব এসেছিল, তার বেশির ভাগই গুরুত্ব পায়নি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েকটি সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ইসির ভূমিকা কেমন হয়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এর আগে নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে ইসি কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিও আস্থা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইসি সরকারের দেখানো পথেই হাঁটতে চায় কি না, তা পরিষ্কার হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন পর্যন্ত ইসির নেওয়া পদক্ষেপে আস্থা অর্জিত হতে পারে—এমন কোনো আলামত দেখা যায়নি। ইসি তাদের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারছে না।

 ইসি বলছে, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্বাচন করতে তারা বাধ্য। মূলত একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি বাধ্য।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *